নিহত:১২০০ ইসরায়েল এবং ৬৭১৬০ ফিলিস্তিনি

দু’বছরে গাজায় আগ্রাসনে ইসরায়েলকে ৩০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

বিশেষ সংবাদদাতা   প্রিন্ট
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫   সর্বশেষ আপডেট : ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

দু’বছরে গাজায় আগ্রাসনে ইসরায়েলকে ৩০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

৭ অক্টোবর মঙ্গলবার দু’বছর পূরণ হলো ইসরাইল-ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় পরস্পর বিরোধী আগ্রাসনের। এ যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস বাহিনী কর্তৃক ইসরাইলিদের একটি উৎসবে অতর্কিত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে। ঐ হামলায় নিহত হন ১১৩৯ তরুণ-তরুণী, যারা সঙ্গীতের মূর্চ্ছনায় মেতেছিলেন। সে সময় হামাস যোদ্ধারা অপহরণ করে কয়েকজন ভিনদেশীসহ ২৫০ জনের মত ইসরাইলিকে। এরপরই ইসরায়েলি বাহিনী হামলা শুরু করেছে গাজা উপত্যকায়। এই পাল্টা অথবা প্রতিশোধমূলক হামলার দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে গাজা স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী গাজায় হত্যা করা হয়েছে কমপক্ষে ৬৭১৬০ জনকে। আহত হয়েছে ১৬৯৬৭৯ জন। এর বাইরে আরো অসংখ্য ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে-যারা ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত স্থাপনায় চাপা পড়েছে। এই দু’বছরের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় করেছে ৩০ বিলিয়নেরও অধিক অর্থ। যা দেয়া হয় ইসরায়েলকে গাজায় হামলা চালানোর জন্যে। এই যুদ্ধ বিস্তৃত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ইরান, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়াসহ আশেপাশের কটি দেশে। সেখানেও ব্যয় করা হচ্ছে মার্কিন অর্থ।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্সে ‘যুদ্ধ-ব্যয় প্রকল্প’র তথ্য অনুযায়ী আমেরিকানদের ট্যাক্সের অর্থ এভাবে ব্যয়ের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। যদিও শান্তি প্রক্রিয়া কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সম্মত হয়েছে হামাসসহ সংশ্লিষ্টরা। এটি প্রকৃত অর্থে সকলে মেনে নিলে গাজায় স্থায়ী শান্তির পথ সুগম হবে বলে সকলের প্রত্যাশা। রোববার এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে খুবই সন্তোষজনক আলোচনার দ্বার উম্মোচনের আভাস দিয়েছে হোয়াইট হাউজ। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহবান সত্বেও এদিন ইসরায়েল গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছিল এবং বেশ কিছু ফিলিস্তিনির নিহত হবার সংবাদ এসেছে গণমাধ্যমে।

ইসরায়েলি হামলায় গত দুই বছরে পুরো গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে এবং ত্রাণের অভাবে বর্তমানে ভয়াবহ ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন গাজার অবশিষ্ট বাসিন্দারা।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ‘যুদ্ধ-ব্যয় প্রকল্প’র তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দু’বছরে যুক্তরাষ্ট্র ২১.৭ বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র দিয়েছে ইসরায়েলকে। একইসময়ে আরো ৯.৬৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১২.০৭ বিলিয়ন ডলারের মত ব্যয় হয়েছে ইয়েমেন, ইরান-সহ আশেপাশের দেশে সামরিক অভিযান পরিচালনাকালে। অর্থাৎ ইসরায়েলিদের সন্তুষ্টির অভিপ্রায়ে গত দু’বছরে যুক্তরাষ্ট্র ঐ অঞ্চলে ব্যয় করেছে ৩৩.৭৭ বিলিয়ন ডলারের মত। এর বাইরে আরো রয়েছে ইসরায়েলকে সামরিক সহযোগিতার বিদ্যমান চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের যুদ্ধ-সরঞ্জাম সরবরাহের অর্থ।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ‘যুদ্ধ-ব্যয় প্রকল্প’র অন্যতম পরিচালক এবং কুইন্সি ইন্সটিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্ট্যাটক্র্যাফট’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো উইলিয়াম হার্টং গাজা পরিস্থিতির আলোকপাতকালে বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ের চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলকে প্রতিবছর সামরিক সহযোগিতা খাতে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার করে যুক্তরাষ্ট্র প্রদানের কথা। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রথম বছরে তা বেড়ে ১৭.৯ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। তবে পরের বছর অর্থাৎ এ বছর তা আবার ৩.৮ বিলিয়ন ডলারে এসেছে।

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতাকে জাতিসংঘ থেকেও বলা হচ্ছে ‘গণহত্যা’। আর এমন বর্বরতার অসহায় ভিকটিম হয়েছে ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি। অর্থাৎ ১২০০ জনের বিপরীতে ৬৭ হাজার জনকে হত্যা করেও ক্ষান্ত হচ্ছে না ইসরায়েল। আর যুদ্ধের তীব্রতা এতটাই ব্শেী যে, দীর্ঘকালিন কোন যুদ্ধে এমন নৃশংসতার আলামত নেই। ইসরায়েলের এমন হিংস্রতার নেপথ্যে হোয়াইট হাউজের সরাসরি ইন্ধন/মদদ রয়েছে এবং তা বাইডেনের আমল থেকেই শুরু। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণারতরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নিষ্ঠুর আক্রমণের যে ভয়ংকর পরিণতি দেখা দিয়েছে তার দায় যুক্তরাষ্ট্র এড়াতে পারবে না বলেই শান্তির প্রস্তাবনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ‘মানবিকতার নামে এমন প্রহসণমূলক আচরণ’ অবাক বিস্ময়ে গোটাবিশ্বের মানবতাবাদিরা অবলোকন করছেন’-মন্তব্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পর্যবেক্ষকগণের। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের স্ববিরোধী আচরণের গতি-প্রকৃতি এখোন জনমত জরিপেও দৃশ্যমান হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ‘নিউইয়র্ক টাইমস/ সিয়েনা’ পরিচালিত এক জরিপে অংশগ্রহণকারি আমেরিকানদের ৬৭% বলেছেন যে, দু’বছর আগে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখোন পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসনের দরদি মনোভাব অনেক বেশী ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতি। এই জরিপে ৫১% বলেছেন যে, এখোন সময় হচ্ছে ইসরায়েলকে আর কোন সামরিক ও ত্রাণ সহায়তা না দেয়ার। গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণবাহী যানবাহন প্রবেশে অবিরতভাবে বাধা প্রদান এবং গাজার নারী-শিশু, এমনকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মানুষের ওপর বোমা হামলার ঘটনার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের রাজপথ উত্তপ্ত হবার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তুমুল প্রতিবাদ উঠেছে এবং এর প্রভাব সাধারণ আমেরিকানদেরও ক্ষুব্ধ করছে বলে জরিপে দেখা গেছে।

কুইন্সি ইন্সটিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্ট্যাটক্র্যাফট’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো উইলিয়াম হার্টং শুরু থেকেই হোয়াইট হাউজের মনোভাবের সমালোচনা করে আসছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা দিচ্ছে তা কোনভাবেই আমেরিকানদের স্বার্থের পরিপূরক নয়। অধিকন্তু সে সহায়তা গাজায় নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইসরায়েলি হামলাকে ত্বরান্বিত করছে।

উপরোক্ত যুদ্ধ ব্যয় প্রকল্পের অপর গবেষক এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কেনেডি স্কুলের সিনিয়ন লেক্চারার ড. লিন্ডা বিলমিস বলেন, যুদ্ধ-সংঘাতে কীভাবে অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা জানার অধিকার আমেরিকানদের রয়েছে। এছাড়া ট্যাক্সের অর্থ কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যয় করা হচ্ছে সে তথ্যও আমেরিকানদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। বড় কথা হচ্ছে ব্যয় হওয়া অর্থ মানবতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় কতটা অবদান রাখছে তা জানার অধিকার আমেরিকানদের রয়েছে।
গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল, অনেকদিন ধরেই এ অভিযোগ করে আসছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। গেল ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয় ‘ইসরাইল গাজায় জাতিগত নিধন (জেনোসাইড) চালাচ্ছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সানাম ভাকিল বলেন, ‘গাজায় গণহত্যার চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ করেছে ইসরাইল। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করেছে আইডিএফ। সেখানে এমন পরিকল্পিত জীবনধারা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা তাদের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে ফেলেছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত নিধনের পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরাইল।’

Facebook Comments Box

Posted ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

nyvoice24 |

Address
New York
Phone: 929-799-2884
Email: nyvoice24@gmail.com
Follow Us